ভয় ভয়ে ভালোবাসা







টুসিকে আমার এখনো ভুলে যাওয়া হয়নি। আজ সকালে এমন আষাঢ়েও পুরো আকাশটাতে নীলের ছড়াছড়ি দেখে আবার তাকে মনে পড়ে গেল। যদিও তা সুখকর নয়। নীল আমাকে খুব আনন্দ দেয়। আমি কখনও বলি না যে, কষ্টের রং নীল। অথচ সেই আনন্দ খুজে পাওয়া নীলের মাঝেই আজ আমি বিষাদের ছায়া খুজে পেলাম। ইউরেকা !! বলে চিৎকার করার কোন সুযোগ ছিলো না। কোন এক সময় পুরো সময়টার জন্যই টুসি আর আমি আলাদা ছিলাম না। দারুন জোড় ছিলো দু’ইয়ের মাঝে। ভয়ংকর সুবোধ মেয়ে বলে জানতো সবাই। একটু আধটু দুষ্টুমি আমার সাথেই ছিলো। তা তো থাকবেই। সংসার নামক জঞ্জাল বাঁধানোর স্বপ্নও যে আমাকে ঘিরে দেখতো। এ রকমই জানতাম আমি।
আমার কাছে তার প্রচুর চাওয়ার ছিলো; প্রতিদিন কিছু না কিছু চাইতো সে। আমিও তা পূরণ করার আনন্দে প্রতিদিনই ভালোবাসা বেশি পেতাম।আমার কাছে তার প্রথম চাওয়া ছিলো একটি বেগুন পাতা রংয়ের রং পেন্সিল !! সে দিন সে বৃষ্টির রাতে, তাও গত এক আষাঢ়ে ঘরে বসে ছবি আঁকার নেশায় পেয়েছিল। চার পাঁচ সেট পেন্সিল খুজেও বেগুন পাতা রঙের পেন্সিল পাওয়া যায়নি। মুঠো ফোনের কল্যাণে আমি হলাম কাক ভেজা। একেতো রাত আটটার পর দোকান বন্ধ। তার উপর বৃষ্টি। তবুও বেরিয়ে পড়লাম ইচড়ে পাকা মনের প্রেম ভ্রমে। গলির মোড়ের একমাত্র দোকান, যেখানে রঙ পেন্সিল পাওয়া যায়- সেটিও বন্ধ! সার্টার পিটিয়ে দোকানদারকে জাগানোর চেষ্ট যখন ব্যর্থ হচ্ছে তখন শয়তানি বুদ্ধিতে মহল্লা ছাড়ার হুমকি দিয়ে তাকে ওঠালাম। কিন্তু হায় !
বেগুন রঙাতো দূরে থাক কোন সবুজ রঙা পেন্সিলই নেই। এ দোকানী একেবারেই খুচরা দোকানী। এক পিস করেও বিক্রি করে। আমি তখন মহা হতাশ। মনটা গেল শশ্মান ঘাটের নিরবতায়। খুব বৃষ্টিতে খুব ভেজা হচ্ছিল তখন। মুঠোফোনের ভাইব্রেটর কেঁপে ওঠাতে তার দ্বিগুনে আমিও কেঁপে ওঠলাম। সপ্তাহ আয়ুর সম্পর্কে এই প্রথম কিছু চাইলো... অথচ আমি দিতে পারলাম না। নিজ যোগ্যতাটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেল। বড্ড অস্থিরতায় ফোন রিসিভ করলাম। “এই শুন... আমি বেগুন পাতা আঁকবো না জবা ফুলের পাতা আঁকবো, পেন্সিলের সবুজটা আরও গাঢ় হতে হবে।”
শুনেই রাস্তার গর্তে জমা পানিতে ধ্যানারধ্যান কতোগুলো লাথি! সফলতার আনন্দে গায়ের শীত, মাংসের কাঁপন সবই কোথায় হারিয়ে গেল। কারণ এ রঙের পেন্সিল আমার টেবিলের ড্রয়ারেই আছে।
টুসির জীবনে অনেক পরিবর্তন এলো বটে, কিন্তু আমি যেমন ছিলাম তেমনই আছি। শুধু সেই থেকে এই পর্যন্ত কেবলই ভেঙ্গে পড়ছি। বিধ্বস্ত হচ্ছি। তবুও জয়ের আনন্দে চোখ দুটো আবার ঝিলিক দিয়ে ওঠে এই ভেবে যে, তাকে কখনওই আমি ফিরিয়ে দিইনি। ঠিক তখনই দু’হাতে মুঠ বেঁধে চোখ বুঝে বুকে নিয়ে মিনমিনিয়ে বলি- “ভাগ্যিস তুমি আকাশ চাওনি ! যদি চাইতে... হয়তো আমার জয় হতো না।”

Popular posts from this blog

হ্যাঁ, অনেক ভালবাসি তোমাকে

মনের মানুষের কাছে প্রথম চিঠি

তোমার দিকে তাকিয়েই থাকি